Saturday, April 29, 2023

পুর প্রশাসনে পালা বদল ঘিরে হালিশহরে কোথাও খুশি, কোথাও গম

বিল্টু কাশ্যপঃ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানিকভাবে হালিশহর পুরসভার মসনদে বসলেন তরুণ ইমেজের শুভঙ্কর ঘোষ। আর শুভঙ্করের ছেড়ে যাওয়া উপ-পুরপ্রধান পদে আসীন হলেন বিদায়ী সিআইসি হিমানিশ ভট্টাচার্য। কিন্তু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তেমন উন্মাদনা চোখেই পড়ল না। 

হালিশহর পুর প্রশাসনে পালাবদল ঘিরে কোথাও খুশি, আবার কোথাও গম চেহারা প্রস্ফুটিত হল। অবাকের বিষয়, হালিশহরের দুর্দিনের নেতা-কর্মীদের চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। 

রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, ঘাসফুলের পুরাতন নেতা-কর্মীদের পেছনে ফেলে নব্যদের আধিপত্য ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠল হালিশহরে। বলা বাহুল্য, ঘাসফুলের শীর্ষ নেতৃত্ব আদি কর্মীদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান দেবার কথা বলে যতই চেঁচাক না কেন, বাস্তবে সেই নির্দেশ নিঃসন্দেহে অন্তঃসার শূন্য,  ফাঁপা। 

একদা হালিশহরের দাপুটে ঘাসফুলের সৈনিক ছিলেন প্রয়াত লক্ষ্মণ সাহানি। কিন্তু তাঁর পুত্র রাজু সাহানিকে একপ্রকার ছেটেই ফেলল শাসকদল। চিটফান্ড কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ার মোক্ষম সুযোগকে ঢাল করেই পুরপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রাজুকে। 

শুধু তাই নয়, হালিশহরের অনেক আদি নেতা ভেবেছিলেন, রাজুর জায়গায় হয়তো শিকে ছিঁড়তে পারে। কিন্তু শক্তপোক্ত লবির কাছে ধরাশায়ী হয়ে পড়লেন ঘাসফুলের আদি নেতারা। 

হালিশহর তৃণমূলের সভাপতি প্রবীর সরকার থেকে শুরু করে মৃত্যুঞ্জয় দাস কিংবা প্রণব লৌহদের পালতোলা নৌকা সুনামির আগেই ডুবে গেল। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটার মতোই প্রবীর সরকার, অশোক যাদব কিংবা মৃত্যুঞ্জয়দের ভাগ্যে সিআইসি পদ জোটে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে হালিশহরের আমজনতা। 

যদিও তরুণ তুর্কি শুভঙ্কর ঘোষ পুরপ্রধান হওয়ায় বেজায় খুশি হালিশহরের তরুণ সমাজ। তাদের দাবি, শুভঙ্করের হাত ধরে সাধক রামপ্রসাদের স্মৃতি বিজড়িত হালিশহর নতুন রূপ নেবে। সদ্য পুরপ্রধান হওয়া শুভঙ্করের সাফাই, মানুষের চাহিদা মেনেই হালিশহরের উন্নয়ন ঘটানো হবে। প্রাধান্য দেওয়া হবে হালিশহরের সৌন্দর্যায়নকেই।

Thursday, April 20, 2023

খেতে না পাওয়া তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরা বিপুল টাকা, সম্পত্তির মালিক, উগরে দিচ্ছেন দুর্দিনে ঝান্ডা ধরা মানুষগুলো

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জেলায় জেলায় বহু তৃনমূল নেতার একাধিক বাড়ি, গাড়ি এখন আর গোপন থাকছে না। তার ওপর নারী সঙ্গে ডুবে রয়েছে এমন নেতাদের চোখ ঘোরালেই দেখছে জনতা।

 দলের উঁচুতলার পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হতেই বিষয়টি কানাঘুষোয় আর থেমে নেই। বিশেষ করে আদি তৃণমূল কর্মীরা এখন মোক্ষম সময় পেয়েছে। উগরে দিচ্ছে পঞ্চায়েত-পুরসভায় কোন নেতার কত জমি, ফ্ল্যাট, হোটেল, বার, রিসোর্ট রয়েছে। ওই সব নেতার মহিলা সঙ্গ বিষয়টি এলাকার সকলেরই জানা। কর্মীরা শুধু উস্কে দিচ্ছেন।

 ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল জন্মেরও আগে রাজনীতিতে এসেছেন অর্জুন সিং। তাঁর বাবা সত্যনারায়ণ সিং কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। স্বভাবতই রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে বর্তমান সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁদের পারিবারিক ব্যবসাও রয়েছে। তিনি ছাড়া সে অর্থে বাম আমলে বিত্তশালী তেমন কোনো নেতা ব্যারাকপুর তৃনমূলে ছিল না। 

কিন্তু এই বারো বছরে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে কোটিপতি নেতার সংখ্যা শতাধিক। 

এরকম অর্জুন গড়ে এক তৃণমূল নেতার উত্থানের কাহিনী রুপ কথার মতো। তাঁর অতীত ছিল সততার সঙ্গে দলের লোকেদের কাছ থেকে চেয়ে চিনতে খাওয়া। ভাঙা সাইকেল ও পোড়া বিড়িতে অভ্যস্ত ছিলেন। এগারোর পর থেকে ভাগ্য খুলে গেল। চেহারা ছবি বদলাতে লাগলো।

 সূত্র জানাচ্ছে, একসময়য়ের ভাড়া বাড়িটির মালিক এখন তিনি নিজে। বাড়ির বাইরের বদল না ঘটলেও ভেতরে কিঞ্চিৎ বদল ঘটিয়েছেন। টাইলস বসেছে। দুটি এসি মেশিনও রয়েছে। এখন তার দুটো চারচাকা। ছেলে পুরসভার কর্মী। ছেলের বউও পুরসভায়। ব্রান্ডেড জামা-প্যান্ট ছাড়া তিনি পরেন না। যদিও সবটাই ঠিকাদারেরা উপহার হিসেবে দেন। 

সূত্রের দেওয়া তথ্যে তাঁর নারী কাহিনী বাদ রাখলাম। কেননা অর্পিতাদের মতো হাইপ্রোফাইল কেউ নেই। সব পাড়া ঘরের মহিলা।

Thursday, April 13, 2023

রাজু নেই, হালিশহরে হিন্দিভাষী মুখ চাইছে তৃণমূল কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মাথা উঁচু করে হালিশহরের  পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজু সাহানি বুঝিয়ে দিলেন তিনি  একজন শৃঙ্খলাপরায়ন নেতা। এতে করেই হালিশহরের একাংশে তৃণমূলের সংকট তীব্র হলো। বিশেষ করে হিন্দিভাষী এলাকা জুড়ে বিষন্ন মানুষজন। মুষড়ে পড়েছে দলের বহু পুরনো মুখ। সঙ্গে সাধারণ কর্মীরাও।

  হালিশহর পুরসভার বড় একটা অংশে হিন্দিভাষী মানুষের বাস। জুটমিল আধ্যুষিত ১৩, ২০, ২১, ২২, ১১, ১৬ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। এই ৭ টি ওয়ার্ডে হিন্দিভাষী ভোটাররা সংখ্যাধিক্য। যা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছিল।

 সেই ভোট ব্যাংকে থাবা বসিয়ে একুশের বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছিল। কিন্তু জয়ের নেপথ্যে অনেকটাই মুখ হিসেবে এলাকায় কাজ করেছিলেন রাজু সাহানি। তাঁর শূন্যতা যে তৈরি হল তা  গোপনে একবাক্যে স্বীকার করছেন বহু কাউন্সিলর। 

   নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে এক প্রবীণ কাউন্সিলর বললেন, হাজিনগর থেকে কোনা মোড় ওই অঞ্চলে একটা নেতৃত্বের সংকট দেখা দেবে। সেই অর্থে ওখানে কোনো সি আই সি মুখও নেই। যদিও এই বিষয়ে দল যা ভালো বুঝবে তাই করবে বলে দায় এড়ালেন ওই কাউন্সিলর।

   হাজিনগর এলাকার জুটমিলের এক শ্রমিক নেতা ৯৮ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন। রাজু সাহানিকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোয় তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি  তাঁর বক্তব্য, এই অঞ্চল থেকে এবার কাউকে সি আই সি পদে আনা হোক। 
   তিনি রাখ ঢাক না করে বলেই দিলেন দু'বারের জেতা কাউন্সিলর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অশোক যাদবকে সি আই সি করে দল অন্তত একটা বার্তা দিক। কেননা ২০২৪ এ লোকসভা নির্বাচন। এই অঞ্চল হালিশহরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

Wednesday, April 12, 2023

রাজু বন গ্যায়া জেন্টেলম্যান হালিশহরে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজু বন গ্যায়া জেন্টেলম্যান। সত্যিই এই রাজু ভদ্রলোক বনে গেলেন! রাজু সাহানি। হালিশহর পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন। বুধবার দলের সিদ্ধান্তে ইস্তফা দিয়ে প্রাক্তন হয়ে গেলেন। তাঁর জায়গায় এলেন একদা উপ পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলানো শুভঙ্কর ঘোষ ওরফে সোনাই।

 
  গত বছর ৩ অক্টোবর রাজু সাহানির রাজারহাটের ফ্ল্যাটে সিবিআই তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা পায়। 'বর্ধমান সানমার্গ' নামক একটি চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে রাজুর যোগ পেয়ে সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি   জেল খেটে ২৩ শে ডিসেম্বর জামিন পান রাজু সাহানি। 

   এলাকায় ফেরেন। কিন্তু কোনো এক নেতার অঙ্গুলি হেলনে পুরসভায় ঢুকতে পারেন না। অবশেষে এই বিষয়ে ব্যারাকপুর কেন্দ্রের সাংসদ অর্জুন সিংও মুখ খোলেন। একমাত্র 'খবর যুগান্তর'- এ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অর্জুন সিং বলেছিলেন,"ও কার ভয়ে পুরসভায় ঢুকছে না বুঝতে পারছি না। দলতো ওকে সরায়নি। তাছাড়া ও তো বাহাদুর বাবার ছেলে আছে। কিসের এতো ভয়!"

  এরপরই বীজপুর জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তার কয়েকদিন পরেই হোলিতে রাজু সাহানিকে বীজপুরের বিধায়কের বাড়িতে দেখা গেল। কেউ কেউ হোলির দিনের ওই ছবি পোস্ট করে বোঝাতে লাগলো বীজপুর ইউনাইটেড তৃণমূল কংগ্রেস। অর্জুন ঘনিষ্ঠ ভাঙতে মরীয়া প্রয়াস। যদিও শেষমেশ একজনের চাপে তাঁকে সরতেই হলো।  

 
  হালিশহর পুরসভার বড় একটা অংশ হাজিনগর-কোনামোড় অঞ্চল। জুটমিল শ্রমিক আধ্যুষিত হিন্দিভাষী এলাকা। ওখানকার মানুষের মধ্যে রাজু সাহানির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাছাড় পুরপ্রধান হিসেবে তিনি মানুষের সমস্যা মন দিয়ে শুনতেন এবং কাজও করতেন।

  স্বভাবতই পুরপ্রধানের পদ থেকে তাঁকে সরানোয় ওই অঞ্চলের শিক্ষিত অংশের মানুষের প্রতিক্রিয়া, অন্তত পুরসভার চুরি, দুর্নীতির দাগ থেকে রাজু বাঁচল। 

তৃনমূল দলের দুর্নীতি নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে তারা তাদের ভাষায় বলছে, রাজু হালিশহরের জেন্টেলম্যান প্রাক্তন পুরপ্রধান।