Thursday, November 23, 2023

স্রোতের প্রতিকূলে লড়াইয়ের ক্ষমতা রাখেন 'বাহুবলী' বলছেন ঘাসফুলের আদি-রা

বিল্টু কাশ্যপঃ ভরা বামআমলে ঘাসফুলের নেতাদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। অথচ টগবগে লাল জমানায় শিল্পাঞ্চলের বুকে ঘাসফুলের একমাত্র সলতে ছিলেন বাহুবলী। নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভোট মেশিনারিকে কাজে লাগিয়ে বাম সরকারের আমলে ২০০১ ও ২০০৬ সালে ভাটপাড়া কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থীদের পরাস্ত করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। 

কিন্তু তৎকালীন সময়ে নৈহাটি, বীজপুর, জগদ্দল কেন্দ্রে বামেদের চোখ রাঙানির ভয়ে অনেকেই ঘাসফুলের প্রার্থী হতে চাইতেন না। অনেকে আবার নিজের কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র মুখগুজে থাকতেন। 

ইতিহাস বলছে, বীজপুর কেন্দ্রে বাবলু রক্ষিত কিংবা বৃন্দাবন দাসদের দাপটে ভয়ে সিটিয়ে থাকতেন তৎকালীন ঘাসফুলের নেতারা। নৈহাটি কেন্দ্রে রঞ্জিত কুন্ডু ও অঞ্জন দাশগুপ্তর দৌরাত্ম্যে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না ঘাসফুল নেতারা। 

জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রে হারাধন মল্লিক, হরিমোহন নাথরা দাপিয়ে বেড়াতেন। যদিও দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হলেই সেখানে ছুটে যেতেন বাহুবলী ও তাঁর ভাই প্রয়াত ভীম সিং। 

শুধু তাই নয়, নব্য তৃণমূলদের জানা উচিত, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হাজার হাজার কর্মীদের নিয়ে মিছিল করে চমকে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী বাহুবলী খ্যাত অর্জুন সিং। 

কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই খোলস ছেড়ে ময়দানে নামেন। সুদিনে 'পড়ে পাওয়া ষোল আনার মতো' টিকিট পেয়ে বিধায়কও হয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে কোনওদিন বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইতে নামতে দেখা যায়নি। ধীলন সরকার কিংবা তরুণ অধিকারী অথবা জগদীশ দাসরা একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছিলেন বামেদের ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর হাতে। 

সূত্র বলছে, বামআমলে গুটিয়ে থাকা ঘাসফুল নেতারা এখন নিজেদের সর্বেরসর্বা ভাবেন। তাদের হাত ধরেই শিল্পাঞ্চলে কিছু 'এক্সিডেন্টাল' নেতাদের আবির্ভাব হয়েছে। এখন তাঁরাই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। তারা হয়তো জানেনই না, ঘাসফুল ক্ষমতায় আসার জন্য বাহুবলীর অবদান কতটা ছিল। 

সূত্র বলছে, সিঙ্গুর কিংবা নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে দলকে লোকবল ও অর্থ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শিল্পাঞ্চলের এই বাহুবলীই। তৎকালীন সময়ে এখনকার অনেক প্রভাবশালীই পোড়া বিড়ি টানতেন কিংবা ভাঙা সাইকেলে চাপতেন। 

সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে বাহুবলীকে আটকাতে কাঠিবাজি করেছিলেন বামআমলে লড়াইয়ের ময়দান থেকে বিরত থাকা নেতারা। কিন্তু বাহুবলীকে আটকে রাখার ক্ষমতা যে নেই, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন বাহুবলীই। 

স্রোতের প্রতিকূলে থেকে  মাত্র ২৮ দিনে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে পরাজিত করেছিলেন শিল্পাঞ্চলকে হাতের তালুর মতো চেনা বাহুবলী অর্জুন সিং। অনেকের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে তিনি প্রমান করেছিলেন শিল্পাঞ্চলে তাঁর দাপট এখনও অটুট। 

বাহুবলীর সেই লড়াইকে স্যালুট জানিয়ে ঘাসফুলের আদি নেতারা নেতা-কর্মীরা বাহুবলীকে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন। 

কারন, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত নেতা-মন্ত্রীরা জেলে থাকায় ঘাসফুল অনেকটাই ব্যাকফুটে। দলের বিপদের দিনে শিল্পাঞ্চল জুড়ে চষে বেড়াচ্ছেন একদা দুর্দিনের ঘাসফুলের লড়াকু সৈনিক অর্জুন সিং। শুধু তাই নয়, নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রে কর্মীদের চাহিদা মেনেই তাঁর সাংসদ তহবিলের অর্থে উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ্য ২০২৪। 

এখন থেকেই সাংসদ অনুগামীরা লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। সাংসদের বার্তা, স্বচ্ছ ইমেজের কর্মীদের সামনের সারিতে আনতে হবে। নাক, কান কিংবা গলা কাটাদের বুথে বসতে দেওয়া যাবে না। 

দলীয় সভা কিংবা অনুষ্ঠান মঞ্চে শুদ্ধিকরনের বার্তা দিয়ে দলের পুরানো কর্মীদের মর্যাদা ও সম্মান দেবার কথায় তাঁর কন্ঠে বারবার প্রতিফলিত হচ্ছে। স্বভাবতই, কর্মী দরদী এবং আপদে-বিপদে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো বাহুবলীকে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন ঘাসফুলের আদি সৈনিকরা।

No comments:

Post a Comment