বিল্টু কাশ্যপঃ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মাটি আন্দোলনের মাটি। মহাবিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল এই ব্যারাকপুর থেকেই। বিধানসভা কিংবা লোকসভা নির্বাচন রাজনৈতিক কারবারিদের নজর থাকে এই ব্যারাকপুরের ওপর। কিন্তু প্রতিকূল আবহে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বুকে জেতার ক্ষমতা কতজন জননেতার আছে, তা ইতিহাস ঘাঁটলে পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে।
চমকে দেওয়া লড়াই হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ঠিক নির্বাচনের মুখে ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শিল্পাঞ্চলের বাহুবলী নেতা অর্জুন সিং। মাত্র ২৮ দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে অবর্তীন হয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তথাকথিত জায়েন্ট কিলার (তড়িৎ তোপাদারকে পরাস্তকারী) তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে পরাজিত করেছিলেন দাপুটে নেতা অর্জুন সিং।
স্রোতের অনুকূলে জেতার ক্ষমতা অনেকেরই থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে অনেকেই জিতেছেন। কিন্তু বামআমলে ২০০১ কিংবা ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পরপর দু'বার বাহুবলী অর্জুন সিং ছাড়া কেউ কি জিততে পেরেছেন ?
শুধু তাই নয়, বামআমলে নৈহাটি, বীজপুর, ভাটপাড়া, নোয়াপাড়া ও ব্যারাকপুর (পূর্বতন টিটাগড়) বিধানসভা কেন্দ্রে মিটিং মিছিলে এখন যারা ঘাসফুলের কান্ডারি দাবি করেন, তাদের ভূমিকা কি ছিল ? এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র দিতে পারবেন ঘাসফুলের আদি নেতারা। কারন, যেখানেই দলীয় কর্মীরা আক্রান্ত হতেন সেখানেই ছুটে যেতেন লড়াকু ইমেজের অর্জুন সিং। সূত্র বলছে, দলের স্বার্থে অর্থ ব্যয় করতেন দাপুটে অর্জুন।
এবার আলোচনা করা যাক, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কিছু কৌশল নিয়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গে বিজেপি বড় ধরনের কোনও ভোটে অংশ নেয় নি। ভঙ্গুর মন্ডল, মোর্চা কাঠামো নিয়ে মজবুত ঘাসফুলের বিরুদ্ধে লড়াই যথেষ্ট কষ্টকর ছিল। পোক্ত ভোট মেশিনারির কারিগর অর্জুন সিং নিজস্ব সংগঠন আর গোপন কৌশলের ছকে পরাস্ত করেছিলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীকে। এখন তিনি তৃণমূলে। স্বভাবতই অনুকূল আবহাওয়া। মসৃন লড়াই।
যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার ৩০ টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে লড়াই কঠিন হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করা হবে, সেটা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু এটা পরিষ্কার আসন ছিনিয়ে নিতে যিনি পারদর্শী, তার ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়বে।
যদিও নির্বাচন হতে এখনও অর্ধেক বছর বাকি। কাটাকাটির অনেক খেলাও বাকি। তথাপি কিছু আনকোড়া অনলাইন বিশ্লেষক, সুদিনে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জেতা শাসকদলের বিধায়কের সঙ্গে সাংসদের তুল্যমূল্য বিচার করতে মরিয়া। আসলে বকশিসের মোহে তারা পেটোয়া নেতাদের গুণগানে ব্যস্ত। ব্যারাকপুরের বাস্তব রাজনীতির ময়দানের অ-আ, ক-খ নিয়ে তাদের সম্যক ধারণা পর্যন্ত নেই।
যেখানে রাজনীতির আঙিনা থেকে বেড়ে ওঠা জুটমিলে কাজ করা, রাজনীতির উর্দ্ধে দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব নেতাদের তুলনা করা হচ্ছে। তা নিয়ে শিল্পাঞ্চলের আনাচে কানাচে চর্চা চলছে। তবে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment