বিল্টু কাশ্যপঃ স্থানীয় দু-একটি পোর্টালের দাবি, বীজপুর নাকি এখন ইউনাইটেড তৃণমূল। কিন্তু আদৌ কি তাই! বাস্তব চিত্র কি বলছে?
বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর বাসভবনে হোলি উৎসবে মাততে দেখা গিয়েছে হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহানী, উপ-পুরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ, সিআইসি হিমানীশ ভট্টাচার্য, কাঁচারপাড়ার পুরপ্রধান তথা বিধায়ক ভ্রাতা কমল অধিকারীদের।
কিন্তু বাকিদের উপস্থিতি তো চোখেই পড়লো না। তবুও বিধায়কের বাড়ির হোলি উৎসবের ছবি দেখিয়ে স্থানীয় শাসক ঘনিষ্ঠ কিছু পোর্টাল জোরের সঙ্গে দাবি করেছে, ভেদাভেদ ভুলে বীজপুর এখন ইউনাইটেড তৃণমূল। আর এই খবরে আড়ালে-আবডালে টিপ্পনি কাটছেন বিরোধী শিবির ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও।
এবার একটু আলোকপাত করা যাক ইউনাইটেড তৃণমূল নিয়ে। কাঁচড়াপাড়ার উপ-পুরপ্রধান তথা প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় থেকে শুরু করে কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস, প্রণব লোহ, সুজাতা দাস এরা কি বিধায়ক শিবিরে, নাকি বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন দলেরই একাংশের।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে মৃত্যুঞ্জয় দাসের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। সেইসময় ব্যারাকপুর কেন্দ্রের সাংসদ অর্জুন সিং ও কাঁচড়াপাড়ার উপ-পুরপ্রধান শুভ্রাংশু রায়কে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল। সূত্র বলছে, তৃণমূল নেতা সুজিত দাস থেকে শুরু করে তৃণমূল নেত্রী আলো রানী সরকার, সোনালী সিংহ রায়, সোমা দাসরা বিরোধী শিবির হিসেবেই পরিচিত।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সুজিত দাস, সোমা দাস শিবির এখন সাংসদ অর্জুন সিং শিবিরে। অতি সম্প্রতি ভাটপাড়ায় বসন্ত উৎসবের উদ্বোধনে সাংসদের পাশে দেখা গিয়েছে সুজিত-সোমাদের। কয়েকদিন আগে বীজপুরের কুমোর পাড়ায় সুজিতের শিক্ষাসামগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং।
স্বভাবতই, বীজপুরে শাসকের বাস্তব চিত্র নিয়ে পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার ফুটে উঠবে 'ইউনাইটেড তৃণমূলে'র বদলে দুইয়ের অধিক বিভক্ত তৃণমূল। কিন্তু একশ্রেণীর পোর্টাল কাউকে খুশি করতে গোষ্ঠীদ্বন্দ ধামাচাপা দিয়ে ঐক্যের চিত্র তুলে ধরার মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসা যাক, হালিশহরের পুরপ্রধানের কথায়। চিটফান্ড কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পুরসভার মসনদে বসছেন না পুরপ্রধান রাজু সাহানি। ওই কেসে তাঁর জামিন মেলার পরও কোনও অদৃশ্য কারনে পুরসভায় যাচ্ছেন না বলেই বীজপুরে কানাঘুষো চর্চা চলছে।
যদিও সম্প্রতি হালিশহর ১৭নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন কাউন্সিলর বন্ধুগোপাল সাহার বাড়িতে এসে 'খবর যুগান্তর'কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাংসদ অর্জুন সিং বলেছেন, ওর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। কার ভয়ে ও পুরসভায় যাচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না। সাংসদের সংযোজন ছিল, রাজু তো লড়াই করা ছেলে। দল তো ওকে পদ থেকে সরায় নি। তবুও রাজুর পুরসভায় অনুপস্থিতি নিয়ে হতবাক সাংসদের মতোই শাসকদলের অনেকেই।
সূত্র বলছে, 'নকল ড্রেনডাইট' আঠা লাগিয়ে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কেউ কেউ ইউনাইটেড তৃণমূল বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। লক্ষ্য, শিবির ত্যাগ করে যাতে কেউ অন্য শিবিরে না চলে যায়। কিন্তু এভাবে ক্ষমতাসীন শিবির কাউকেই ধরে রাখতে পারবে না বলেই খবর রাজনৈতিক মহলে। সূত্র বলছে, অনেকেই তলে তলে ঝুঁকে গিয়েছেন সাংসদ শিবিরে।
তবে বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, আগামী দু-তিনমাসের মধ্যেই শুধু বীজপুর নয়, গোটা লোকসভা কেন্দ্র জুড়েই ওলট-পালট 'ইউনাইটেড' প্রকাশ্যে এসে পড়বে।
ধরে নেওয়া যাক, আগামীদিনে বীজপুরে রাজনৈতিক সমীকরনের বদল ঘটলো। তখন কি কেউ কেউ শিরদাঁড়া ভেঙে নতুন সমীকরনের জার্সি গায়ে পড়বেন? অতীতে আগে যেমনটা দেখা গিয়েছিল। বীজপুরের আকাশে-বাতাসে এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সময়ের প্রতীক্ষায়।
No comments:
Post a Comment