বিল্টু কাশ্যপঃ অতীতকে স্মরনে রেখেই ভবিষ্যৎ এগোয়। কিন্তু উল্টো বলছেন স্বয়ং শাসকদলের আদি সৈনিকরাই। কে এমন বলছেন? তারই উত্তর খুঁজল 'খবর যুগান্তর'।
দুদিন আগে ভাটপাড়া ও নৈহাটি বিধানসভার সীমান্তবর্তী ঘোষপাড়া রোডের ধারে একটি চায়ের দোকানে সাক্ষাৎ দুই মাঝবয়সীর সঙ্গে। চায়ের আসরে কয়েকজনের সঙ্গে ওই দুজন মাঝবয়সীও কথাবার্তা বলছেন। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা বিস্ময় প্রকাশ করছেন। চায়ের আসরে হঠাৎ-ই শাসকদলকে তুলোধনা শুরু করলেন ওই দুই মাঝবয়সী।
রাগের কারন কি, প্রশ্ন করতেই ওনারা ক্ষেপে লাল। ওনারা বললেন, অতীত ভূললে ভবিষ্যৎ ডুববেই। ওনারাই পুরানো স্মৃতি রোমন্থন করলেন। টগবগে বাম জমানার ইতিহাস তুলে ধরলেন। বুঝলাম, এনারা তাহলে ঘাসফুলের দুর্দিনের সৈনিক।
ওনারাই বলছিলেন, বামআমলে নৈহাটিতে ঘাসফুলের ঝান্ডা বইবার লোক ছিল না। রাতের আঁধারে দেওয়াল লিখন, পোষ্টার লাগানো সবই করেছি। বর্তমানে যারা আঙ্গুলি হেলাচ্ছেন, তাদের কেউ আবার সোদপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকতেন। স্কুল নির্বাচন হোক কিংবা পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েত সকলেই ভয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকতেন। দু-একজন সাহস করে বেরিয়ে ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর রোষানলে পড়তেন।
তৎকালীন সময়ে আপদে-বিপদে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একমাত্র বিরোধী সলতে 'বাহুবলী'ই আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেন। আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। এখন টাকার পাহাড়ে বসে থাকা অহংকারীদের কি সেই দুর্দিনের কথা মনে পড়বে? বিলাসবহুল জীবনযাপনে হয়তো সবকিছু ভূলতে বসেছেন, এমনই প্রশ্ন তারা চায়ের আসরে বারবার তুলে ধরলেন।
তবে এখানেই শেষ নয়। স্মৃতি রোমন্থন করলেন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথাও। তৎকালীন সময়ে 'বাহুবলী' যেভাবে সমস্ত কিছুর যোগান দিয়েছিলেন। সেটাও তারা 'বমি' করলেন। আসলে তারা বোঝাতে চাইলেন, অতীতকে ভুলতে নেই।
২০০৯ সালে 'জায়েন্ট কিলার'কে সঙ্গে নিয়ে ব্যারাকপুর লোকসভার এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্ত চষে বেরিয়েছিলেন সেই 'বাহুবলী'ই। ২০১০ সালে পুরসভা নির্বাচনে জয়জয়কার হতেই দিন বদলে যায়। বামআমলের রিগিং মাস্টার, ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীরাই জার্সি বদল করে ঘাসফুলে নাম লিখিয়ে নেয়। এতেই তাদের মতন দলের দুর্দিনের সৈনিকদের কোণঠাসা হয়ে পরবর্তীতে ঘরে বসে যেতে হয়েছে।
গল্পের ছলে ওনারা অতীত আউরে চলেছেন। একঝলক মুখের দিকে তাকাতেই দেখি, ওনাদের চোখ ছলছল করছে। বুঝলাম, মনের ক্ষত এখনও শুকোয় নিই। আসলে ওনারা দলটাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। বিনিময়ে পেয়েছেন শুধুই আঘাত।
২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তন ঘটলেও, কেউই মনে রাখে নি ওদের। শুধু তাই নয়, ওনারা আক্ষেপের সুরেই বলছিলেন, এখন তো দলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দল না করেই অনেকেই পুরসভার টিকিট পেয়ে জনপ্রিতিনিধি হয়ে গিয়েছেন। ব্রাত্য সৈনিকদের কথায়, শীর্ষ নেতৃত্ব সব জেনেবুঝেও ধৃতরাষ্ট্রর ভূমিকায়। দুর্নীতিতে জজ্জ্বরিত হয়ে গাড্ডায় নিমজ্জিত হওয়ার পর নেতাদের মনে পড়ছে পুরানো কর্মীদের কথা।
আলোচনায় এতকিছু উঠে আসার পর চায়ের ভার ফেলেই বেঞ্চ থেকে উঠে পড়লেন ওই দুই মাঝবয়সী। বললাম দাদা, আপনারা কোথায় থাকেন। মুখে উত্তর মিলল না। শুধু হাত দিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন তারা সাহিত্য সম্রাটের শহরবাসী। চায়ের আড্ডার বসে থাকা মানুষজন বুঝতেই পারলেন না শ্রোতা একজন সংবাদ কর্মী। যদিও এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সেদিন ছিলেন তাঁর সহধর্মিনীও।