বিল্টু কাশ্যপঃ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক মাপকাঠি মূলত জুটমিল ঘিরেই। সঙ্গী কয়েকটি অন্যান্য কলকারখানা। কালক্রমে জুটমিলগুলো রুগ্ন হয়ে পড়েছে।
নৈহাটির গৌরীপুর জুটমিলে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। এই বন্ধ মিল নিয়ে রাজনীতি করে অনেকেই বিধায়ক ও সাংসদ হয়েছেন। ভোটের প্রাক্কালে মিল খোলার ধাপ্পা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিক মহল্লার ভোট লুঠেছে বাম-ডান সকলেই। কিন্তু গৌরীপুর জুটমিল যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেল। মিল চত্বর এখন শ্মশানে পরিণত।
শুধু তাই নয়, বাম জমানাই হোক কিংবা ডান আমল, নেতা-নেত্রীদের আন্দোলনে ভিড় বাড়িয়েছিলেন জুটমিল শ্রমিকরাই। জুট শ্রমিকের ভোট ব্যাঙ্ককে পুঁজি করেই ব্যারাকপুর কেন্দ্রে সাংসদ হয়েছিলেন তড়িৎ বরণ তোপদার ও দীনেশ ত্রিবেদী। অথচ জুটমিল শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা বদলায়নি।
এখন রাজনৈতিক নেতাদের নাম শুনলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন বিপন্ন শ্রমিক পরিবারগুলো। নির্বাচনের ঠিক একমাস আগে ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শ্রমিক নেতা অর্জুন সিং। জায়েন্ট তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে পরাস্ত করে ব্যারাকপুরের মসনদে বসেন একদা চটকল শ্রমিক লড়াকু নেতা অর্জুন সিং।
ভাগ্যের এমনই পরিহাস, করোনা সংক্রমণের জেরে দুবছর লকডাউনেই কেটে গেল। করোনা কিছুটা স্থিতিশীল হতেই তিনি রুগ্ন জুটমিলগুলোকে চাঙ্গা করার লড়াইতে অবতীর্ণ হলেন। বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার মতোই পাটশিল্প ও জুটমিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সূর চড়ালেন গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধি হয়েই।
সরাসরি সংঘাতে নামলেন তাঁর নিজের দলের সরকারের বিরুদ্ধেই। নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রীমন্ত্রী ও জুট কমিশনারকে। জল বহুদূর গড়িয়ে ডাক পেয়ে দিল্লিতে গিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং।
কলকাতায় ফিরে তাঁর মন্তব্য, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পাটের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করবে কেন্দ্র। পাশাপাশি ট্যারিফ কমিশনের বিষয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।
যদিও বিরোধীদের টিপ্পনি, তৃণমূলের যাবার পথ প্রস্তুত করতেই অর্জুনের পাটশিল্প ও জুটমিল নিয়ে আন্দোলন।
তবে বিরোধীরা যতই টিপ্পনি করুক না কেন, অর্জুনের লড়াইয়ের ফসল হিসেবে পাটশিল্প কিংবা রুগ্ন জুটমিলগুলো চাঙ্গা হবার আশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুট নিয়ে অর্জুন সিংয়ের লড়াই বঙ্গ রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
No comments:
Post a Comment