চিত্ত ওঝাঃ উত্তম-সুচিত্রার পর বাংলা সিনেমা বেশ খানিকটা সমস্যায় পরেছিল। শেষে আশির দশকে টালিগঞ্জ নতুন আঙ্গিকে ঘুরে দাঁড়াল দু'জন পরিচালকের হাত ধরে। যাদের মূল রসায়ন ছিল চোখা চোখা সংলাপ। সেই ধারা আড়াই দশক ধরে বজায় থাকল। পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারতের ছবির অনুকরণে সংলাপ, একশান এবং গল্প ঢুকে পরল টলি পাড়ায়। সেরকমই 'মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে', 'মার গুর দিয়ে রুটি চিনি দিয়ে চা ফু দিয়ে খা' এরকম সংলাপ গ্রাম বাংলা জুড়ে মাত করেছিল। এক ছোবলে ছবি থেকে টুম্পা গানের লিরিক যা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রীতিমতো বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। ঠিক তেমনি বাংলার রাজনীতির ধারা এখন টালিগঞ্জের পথেই বইছে বলে মনে করেন ছাপহীন সুচিন্তিত বহু ব্যক্তিত্ব। ভোটের অনেক আগে থাকতেই যার পরখে পরখে ছোঁয়া ছিল।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃনমূল ১৮ টি আসনে হেরে দিশেহারা হয়ে পরল। দল ও সরকার বাঁচাতে যুক্ত হলেন পেশাদার প্রশান্ত কিশোর। তিনিই প্রথম 'দিদিকে বল' দিয়ে শুরু করলেন। ধাপে ধাপে 'বাংলার গর্ব মমতা', 'বাংলা নিজের মেয়েকে চায়', 'দুয়ারে সরকার' এবং শেষে 'খেলা হবে'। এ যেন হিট ছবির ফিট ডায়লগ। তৃনমূলের রাজ্য জয়ে এখন মুখে মুখে ঘুরছে খেলা হবে। অটো-টোটোওয়ালা থেকে সব্জি-মাছ বিক্রেতা, হকার থেকে বাস কন্ডাক্টর রসিকতা করে বলছে 'খেলা হবে'।
টলি পাড়ার বানিজ্যিক ছবির মতোই এই রাজনৈতিক সংলাপ ঘিরে শাসক বিরোধী দ্বন্দ লেগেই রয়েছে। ভোট পরবর্তী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি দাবি করে, এই খেলা হবে-র অর্ন্তনিহিত মানে মারধর, লুটপাট, ধর্ষণ, খুন। যা নাগাড়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ওপর প্রয়োগ হয়ে চলেছে। এখন আবার বহু জায়গায় তৃনমূলের গোষ্ঠী কাজিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও তৃনমূল অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে।
তবু কিছু রঙ বিহীন মানুষ আছে যারা রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া পরস্পর ঘটনার সঙ্গে সংলাপের নমুনা দেখতে পাচ্ছেন। এমনই এক ঘটনা বুধবার উত্তরবঙ্গের তুফান গঞ্জে ঘটল। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী অর্পিতা রাভাকে স্হানীয় বারো কোদালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ইনকাম সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাঞ্ছিত হতে হল। কেননা তার বাবা বিজেপি করে। অভিযোগ, পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতেই বাধা দেয় কয়েকজন তৃনমূল নেতা। রীতিমতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে বের করে দেয়। এরপর সে কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পরে। শেষে বক্সিরহাট থানা থেকে পুলিশ ছুটে আসে। এটা কোন ধরনের খেলা তা বুঝতে কারো বাকি নেই। যদি এই খেলাই রাজ্য জুড়ে চলতে থাকে তাহলে অচিরেই রাজনীতি টলি পাড়ার জায়গা নেবে।
লেখকের কলমে 'আলো " আছে.
ReplyDelete