বিল্টু কাশ্যপঃ হ্যালির ধুমকেতুর মতো আচমকা ঘাসফুলে আবির্ভাব হওয়া 'এক্সিডেন্টাল' নেতা-কর্মীরা সিঙ্গুর কিংবা নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়ে অবগত নন। তাদের লাল পার্টির হার্মাদদের মুখোমুখিও হতে হয়নি। 'পড়ে পাওয়া ষোল আনা'র মতোই কেউ বিধায়ক হয়েছেন। আবার কেউ দলীয় সংগঠনের পদও পেয়েছেন।
কিন্তু শিল্পাঞ্চলের বাহুবলী খ্যাত ঘাসফুলের দুর্দিনের লড়াকু সৈনিক অর্জুন সিং তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন। টগবগে বাম জমানায় ঘাসফুলের অনেক নেতাকেই তৎকালীন সময়ে লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যায়নি। উল্টে নিজের এলাকা ছেড়ে তাদের অন্যত্র দেখা যেত।
ওই সময়ে শিল্পাঞ্চলের বুকে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দেখা যেত একমাত্র বাহুবলীকেই। সিপিএমের ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতেন এই বাহুবলীই।
কিন্তু সেদিন যারা লড়াইয়ের ময়দানে ছিলেন না। কিংবা ঘাসফুলের সুদিনে যারা গেরুয়া বসন ছেড়ে তৃণমূলে ভিড়েছেন। তারাই এখন বাহুবলীকে 'কুমড়ো' আখ্যা দিচ্ছেন। ঘাসফুলের আদি কর্মীদের কাছে যা হাস্যকর।
ইতিহাস বলছে, বাম জমানায় তৎকালীন সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে নেত্রীর পাশে থেকে লড়াই করেছেন শিল্পাঞ্চলের এই বাহুবলী। শুধু তাই নয় বামআমলে ২০০১, ২০০৬, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মিশ্র ভাষাভাষীর ভাটপাড়া কেন্দ্র থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার কান্ডারী তিনিই।
বামআমলে ২০০১ কিংবা ২০০৬ সালে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে ভোটে দাঁড়ানোর সাহস ছিল না ঘাসফুলের অনেক নেতার। যদিও তারাই এখন নিজেদের 'সর্বের সর্বা' ভাবছেন। বলাবাহুল্য, সম্প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে জগদ্দলের অকল্যান্ড থেকে ভাটপাড়া মোড় পর্যন্ত বাহুবলী সাংসদের নেতৃত্বে মিছিল অনেকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
পরবর্তীতে শ্যামনগর বাসুদেবপুর মোড় থেকে তেরঙ্গি পর্যন্ত মিছিল কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আটকে গেল। এভাবে কতদিন আটকে রাখবেন তাদের প্রিয় নেতা বাহুবলীকে, তা নিয়েই দলের আদি কর্মীদের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, দলের রণকৌশল নিয়ে সোমবার দিল্লিতে সাংসদদের নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর বৈঠক হয়েছে। সেখানে তৃণমূল সুপ্রিমোর একদম পাশেই দেখা গিয়েছে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে। নেত্রী-অর্জুনের নৈকট্যের এই ছবি দেখে শিল্পাঞ্চলের অনেকের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
যদিও ব্যারাকপুর কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বাহুবলীকে মেনে নিয়েই ঘাসফুলের আদি কর্মীরা ময়দানে নেমেও পড়েছেন। কিন্তু আড়কাঠিরা এখনও বাহুবলীকে আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সিপাহী বিদ্রোহের মাটি এই ব্যারাকপুর। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে মাত্র ২৮ দিনের লড়াইতে বাজিমাত করেছিলেন সেই বাহুবলীই।
তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ঘাসফুলের কাছে খুব কঠিন লড়াই। একদিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দলের হেভিওয়েটরা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও বিজেপি উভয়ের সাঁড়াশি আক্রমণ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা আছে একমাত্র বাহুবলীর। এটাও জানেন দলের আদি কর্মীরা। তাই হয়তো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তারা বাহুবলীকেই চাইছেন। যদিও সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলবে মাত্র কয়েকটা দিনের প্রতীক্ষায়।
No comments:
Post a Comment