Sunday, August 15, 2021

টোকিও অলিম্পিক চেনাল ভারতীয় নারী শক্তিকে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতা ৭৫-এ পড়ল। বিশ্বের দরবারে এক অভূতপূর্ন উত্থান হয়েছে এ দেশের নারী শক্তির৷ সদ্য সমাপ্ত  টোকিও অলিম্পিকে সমানে সমানে লড়াই দিয়েছেন নারীরা৷ তাঁদের কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গর্বিত করেছে গোটা দেশকে৷ নারী শক্তির এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে দেশের জনতা৷ শাইখম মীরাবাই চানু, পিভি সিন্ধু, লাভলিনা পদক পেলেও ভারতীয় মহিলা হকিদল, কমলপ্রীত, মেরিকম, অদিতি অশোক এবং ভবানী সহ আরো অনেক নারীরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বিশ্ব দরবারে৷ তাঁদের অতুলনীয় প্রদর্শনে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে নেট দুনিয়ার মানুষ৷ ভারতে হকি, ক্রিকেট, বক্সিং ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি প্রথম সারির খেলা বাদে অন্যান্য খেলার ততটা জনপ্রিয়তা নেই৷ তাই যারা বেনামী খেলা নিয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরাও খুব একটা জনপ্রিয়তা পান না৷ অন্য সমস্ত খেলার তুলনায় এই খেলাগুলোর জৌলুস কম৷ 
এবারে টোকিও অলিম্পিকে অদিতি অশোক এবং ভবানী দেবী এমন দুটি বেনামি খেলা নিয়ে বিশ্বের মঞ্চে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন যা দেশের বহু মানুষের কাছে আজানা৷ গল্ফার অদিতির জন্ম ব্যাঙ্গালোরে৷ পাঁচ বছর বয়সে তাঁর হাতেখড়ি৷ অদিতিই প্রথম ভারতীয় গল্ফার যিনি ২০১৩ সালে এশীয় যুব গেমস, ২০১৪ তে যুব অলিম্পিক, ২০১৪ এশীয়ান গেমস ও সেই বছরই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ তখন তাঁর মাত্র ১৮ বছর বয়স। এত কম বয়সে তার আগে কেউ অলিম্পিকে গল্ফে নামেনি৷ অদিতিই প্রথম ভারতীয় ২০১৭ সালে মেয়েদের ইউরোপীয় ট্যুর খেতাব জেতেন৷ 
অদিতির বাবা আশোক রিয়াল এস্টেটে কাজ করেন৷ রিও অলিম্পিকে আশোক ছিলেন ক্যাডি (গল্ফ খেলোয়াড়ের ব্যাগ বহনকারি)৷ টোকিও অলিম্পিকে সেই ভুমিকায় ছিলেন অদিতির মা মাশ। তিনি একজন রেডিয়ো জকি৷ অদিতি মেয়েদের স্ট্রোক প্লে ইভেন্টে টানা প্রথম তিনে ছিলেন৷ দেশবাসী ধরেই নিয়িছিল গল্ফে প্রথম পদক আসছেই৷ কিন্ত শেষদিন বৃষ্টিবিঘ্নীত ম্যাচে ১৭তম হোল এ বার্ডি মারতে ব্যর্থ হন এবং চার নম্বরে গিয়ে পদক দৌড় থেকে ছিটকে যান৷ রিও অলিম্পিকে ৪১ তম স্থানে ছিলেন অদিতি৷ আর সেখান থেকে টোকিও অলিম্পিকে চতুর্থ৷
 অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের আরও এক কন্যা চাদালাভাদা আনষ্কা অসুন্দরামান ভবানী  টোকিও অলিম্পিকে প্রথম ফেন্সিং খেলায়  অংশগ্রহণ করেছেন৷ প্রথম বারেই ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিয়ে গিয়ে ইতিহাস গড়লেন৷ চেন্নাই তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ভবানী শুরুটা দুর্দান্ত ভাবে করলেও শেষমেষ ফাইনাল রাউন্ডে পরাজিত হন৷ মহিলাদের রাউন্ড অফ সিক্সটি ফোর-এ নাদিয়া আজিজ কে ১৫-৩ ব্যাবধানে পরাজিত করে চমকে দেন দেশবাসিদের৷ তাঁর বয়েস মাত্র ২৭৷ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মঞ্চে এমন এক বেনামী খেলা নিয়ে ভারতের হয়ে যে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন তা সত্যি প্রশংসনীয়৷ চেন্নাই মুরুগা ধনুষ্কোটি গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করতেন৷ সেখান থেকেই ফেন্সিং খেলার সূত্রপাত। তিনি প্রথমবার নাম দিয়েছিলেন ফেন্সিং প্রতিযোগিতায়৷ কিন্তু সেই সময় এই খেলাটি সম্বন্ধে কোনোরকম ধারনা ছিলনা৷ স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি জ্ঞান আদায় করেন এবং এটাও জানতে পারেন যে ফেন্সিং খেলাটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল৷ অভাবের সংসারে খরচের কথা শুনে পিছিয়ে আসতে চান ভবানী৷ তাঁর বাবা সি সুন্দরামন পেশায় পুরোহিত ছিলেন ও মা গৃহকত্রী৷ বাবা- মা মেয়ের স্বপ্ন পুরণের পথে আর্থিক অনটনকে বাধা হতে দেয়নি৷ 
মেয়েকে ফেন্সিং প্রশিক্ষণের জন্য তাঁরা তাঁদের সমস্ত গয়না বিক্রি করে ৬ হাজার টাকা দিয়ে খেলার সরঞ্জাম কিনে দিয়েছিলেন৷ হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে ভবানী দেবীর অনুশীলনের খরচ মেটাতেন তাঁর বাবা৷ মেয়ের খেলার খরচ যোগানের জন্য তাঁরা কড়া নেড়েছে স্পনসরের দরজায়৷ কিন্তু কোনো লাভ হয়নি৷ দীর্ঘদিন প্রশিক্ষক ছাড়াই খেলার অনুশীলন করেন ভবানী দেবী৷ কিন্তু তাঁদের মিলছিল না সাফল্য৷ অবশেষে এক প্রতিযোগিতায় এক প্রশিক্ষকের নজরে পড়েন ভবানী দেবী৷ তিনি তাঁকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান৷ তাঁর প্রশিক্ষণে প্রথম অনুব্বর্ধ-১৭ জাতীয় প্রতিযোগিতা সোনা জেতেন ভবানী দেবী৷ ভবানী দেবীকে খেলা শেখানোর জন্য ১০ লক্ষ টাকা ধার করে ফেলেছিলেন৷ এমন আর্থিক অনটনে ভবানী দেবী খেলা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেই সময় প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের দুর্দশার কথা জানতে পেরে তামিলনাড়ুর তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তাঁকে বাড়িতে ডেকে অর্থ সাহায্য করেন৷ তাঁরপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি ভবানী দেবীকে৷ ২০১৪ সালে এশীয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপে রুপো৷ এবার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেন৷ 

টোকিও অলিম্পিক এদেশের নারীদের কাছে একটা বড় শিক্ষা। কেননা  যে দেশে এখনো পনের বলি হতে হয় কন্যাদের। প্রত্যন্ত গ্রামে মহিলাদের ঘর থেকে বাইরে বেরতে দেওয়া হয় না৷

No comments:

Post a Comment