Wednesday, June 21, 2023

পঞ্চায়েতে টিকিট না মেলায় হতাশ দুর্দিনের একাধিক ঘাসফুল কর্মী

বিল্টু কাশ্যপঃ নব্যদের ভিড়ে রীতিমতো কোণঠাসা ঘাসফুলের দুর্দিনের সৈনিকরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট পাবার ক্ষেত্রে নব্যদের প্রাধান্যই এবার লক্ষ্য করা গিয়েছে। এতেই পরিষ্কার শাসকদলে এখন আদিদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। দুর্দিনের কর্মী অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীপদ মেলেনি এমন উদাহরণও ভুরিভুরি। 

তৃণমূলের জন্মলগ্ন অর্থাৎ ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করছেন জগদ্দল বিধানসভার কাউগাছি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দর্জি পাড়ার বাসিন্দা গোলাম কাদির। বাম আমলে দলের বুথ সামলাতে গিয়ে একাধিকবার তৎকালীন হার্মাদদের হাতে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু একবারের জন্যও দল তাকে সম্মান কিংবা মর্যাদা দেয়নি। 

জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি ভেবেছিলেন দল হয়তো এবার শেষবারের মতো সুযোগ দেবে। কিন্তু শেষমেশ নিটফল জিরো। জমা দিয়েও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে কাদিরকে। পুরানো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কাদিরের চোখে জল নেমে আসে। আক্ষেপের সূরে তিনি বললেন, দল করতে গিয়ে জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। প্রার্থী হবার ক্ষেত্রে একটিবারও সুযোগ মিলল না। 

ওই পঞ্চায়েতের কমলপুরের বাড়ি নন্দন পালের। তিনিও দলের একজন পুরনো সৈনিক। ভরা বামজমানায় ২০০৩ সালে একবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে বামেদের ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস বোধহয় কারও ছিল না। যদিও তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর শুধু নন্দন নয়, ওনার মতো অনেকেই দলে ব্রাত্য থেকে গেছেন। 

ওই স্থানের বিধানপল্লীর বাসিন্দা মিতা সরকার, বিবেকনগরের আশীষ তরফদার, রথতলার সমীর চ্যাটার্জিদের একই দশা। বামজমানা থেকে মনেপ্রাণে ঘাসফুলকে ভালোবেসে কপালে কিছুই জুটল না। নব্যদের ভিড়ে একপ্রকার হারিয়ে গেছেন ঘাসফুলের দুর্দিনের যোদ্ধারা। 

ব্রাত্যদের আক্ষেপ, দলের সুদিনে অন্যদল থেকে ধুমকেতুর মতো আসা কর্মীরা টিকিট পেয়েছেন। অথচ হার্মাদ, ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেও দলের সুদিনে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা তাঁদের। 

উল্লেখ্য, এবার ভোট যুদ্ধে অনেকেই উৎসাহের সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সুপ্রিমোর হুঙ্কার শুনেই একে একে তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন। 

কালীঘাটের বাড়িতে দলের কোর কমিটির সদস্যদের বৈঠকে দলনেত্রীর হুঁশিয়ারি ছিল, নির্দলরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় দলের জানলা-দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এহেন হুঁশিয়ারির পর শিরদাঁড়া সোজা থেকে দলের প্রতীকের পরিবর্তে নির্দল প্রতীকে লড়াই করার ক্ষমতা ক'জনের আছে। স্বভাবতই যা হবার তাই হল। 

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন অর্থাৎ ২০ জুন পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিলেন। চোখ ছলছল অবস্থায় অনেকেই আক্ষেপের সূরে শোনালেন, দল অনেক কিছু দিয়েছে। এবার ভালোয় ভালো ঘরে বসে যাওয়াই শ্রেয়।

Thursday, June 8, 2023

প্রাক্তন পুরপ্রধান অংশুমানের সময়েই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হালিশহরের ১১ কাউন্সিলর

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বুধবার ১১ ঘন্টা ধরে হালিশহর পুরসভায় তল্লাশি চালালো সিবিআই। যাওয়ার সময় কিছু নথি তারা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। এই দীর্ঘ তল্লাশিতে কি উঠে আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

কিন্তু অয়ন শীল যোগ সূত্রে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার অনেক আগেই হালিশহর পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন দলের সিংহভাগ কাউন্সিলররা। রীতিমতো এই বিষয়ে তারা হাইকোর্টে মামলাও করেন। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সেই মামলাটি যায়। 

২০১৯-র ১৬ ই সেপ্টেম্বর হালিশহর পুরসভার ১১ জন কাউন্সিলর প্রথম পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। সে সময় পুরপ্রধান ছিলেন অংশুমান রায়। 

বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরনীতে লিপিবদ্ধ করতে ওই এগারো কাউন্সিলর একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে উল্লেখ থাকে, "পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বরূপ গাঙ্গুলী ইন্টারভিউ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ওই ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। কোনো ব্যক্তির আত্মীয় চাকরি পরীক্ষায় সফল হয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেতেই পারে। কিন্তু বোর্ডের কাছে আমাদের প্রশ্ন, পুরপ্রধান কি তার ইন্টারভিউ নিতে পারেন? এই পক্রিয়াটি আইনের চোখে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অনৈতিক। স্বরূপ গাঙ্গুলীর নিয়োগ বাতিল করা হোক।"

চিঠিতে দাবি করা হয়, একাধিক প্রার্থীর বয়সের উর্ধ্বসীমা অতিক্রম হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ক্লাস এইট পাশের জাল সার্টিফিকেট জমা করে বয়স কমিয়ে চাকরি পরীক্ষায় বসেছেন এবং নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন। শেষে তারা পুরপ্রধানের কাছে জানতে চান ডি এল বি-র অনুমোদন আছে কী? যদি থাকে চিঠির প্রতিলিপি পেশ করা হোক। 

এই নিয়োগ নিয়ে এক কাউন্সিলর ডি এল বি এর কাছে চিঠিও দেন। চিঠিতে পদের উল্লেখ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের বিষয়টি দেখতে বলেন।

পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই চিঠিতে যে ১১ কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্ধু গোপাল সাহা, মহাদেব বিশ্বাস, সুজাতা বিশ্বাস, তপন কুমার দত্ত(ভাইদা), অশোক কুমার যাদব এবং দেবাশীষ দত্ত।